উল্লম্ব সমুদ্রঃ ঋপন ফিও


উল্লম্ব সমুদ্র
ঋপন ফিও


I want to sleep awhile,
Awhile, a minute, a century;
But all must know that I have not died;
That there is a stable of gold in my lips;
That I am the small friend of the west wind;
That I am the immense shadow of my tears.


রিয়াং
১।
হঠাৎ এক টিলা এল।

পুরানো ছাতা পড়া কিছু মেয়ে
অনেক নীচু নদী থেকে

আমগজ জল শুষে নিয়ে
ঢুকে আসছে পরিচিতি গানে ও পরম্পরায়।

২।
একটাই পাহাড়ের গায়
উল্কির শোক এঁকে

ফিরে আসি আর

রহস্য বাড়ি বয়ে এসে
তোমার ধারণা দিয়ে যায়

ফি বছর শীতে।

আর তুমি তো অনেক

অনেক অনেক

তাই

তোমায় জমিয়ে জমিয়ে আমার
হাসিখুশি কেটে যায় বাকি পাঁচ ঋতু।

৩।
উভলিঙ্গ জটাধারী প্রাণী হয়ে যাই।

শীতঘুম শেষে
বন্ধু সাপেদের আনাগোনা শুরু হয়

প্রায় তিন মাস ব্যাপী ওদের একেকটা
স্বপ্ন শোনায় ওরা আমায়, প্রায় প্রত্যেকে...

ছেড়ে আসা খোলসের গান গেয়ে হাসে;
স্পষ্ট দৃশ্য হয় প্রতিটি শীতঘুম জুড়ে
এক অলীক মৃত্যুবোধ

এসব হাসিতে।

৪।
সুষম এক আলোর বেলায়
মেয়েটা জেগে ওঠে রোজ ভোরে।

প্রিয় ঘোরে তখন তার
এলোকেশি ছেলে সব

প্রজাপতি পিছু একটা করে
চুমু পেতে দিচ্ছে জলের নিয়মে।

মুহূর্তের চেয়েও ক্ষীণজীবী সব ধারণাকে
এই সময়টা

মেয়েটা জমিয়ে রাখতে পারে তার চোখের ড্রয়ারে।

পুরোটা ভেতর তার জঙ্গল,
পুরোটা ভেতর জঙ্গল মেয়েটার।

৫।
পরিচ্ছন্ন পাহাড়ি দুপুরের
চুলখোলা আলো, তাপহীন -
পাক খেয়ে মরে যাচ্ছে অনর্গল
দু’মুখ খোলা খাদের গাম্ভীর্যে।

বয়স্ক ফুলগাছগুলো এলোমেলো উঁচু হয়ে আছে।

Déjà vu
কয়েকটা বিশেষ সন্ধ্যায়
আমার নিজেকে পুড়িয়ে
পোড়া গন্ধটা পেতে ইচ্ছে করে

সে সব সন্ধ্যায় আমার শহরে
আগুন জ্বালাবার কোন উপায় থাকে না।

আমি হন্যে হয়ে ঘুরি

সকলেই সহজ হেসে থাকে চারপাশে...

উৎসব কোন?
অখিল উন্মাদ হয়ে গেল নাকি!

এই তো ক্রমশ ঘুম-ও পেয়ে যাচ্ছে আমার...
বেড়ালটাও অবিকল রাস্তা কেটে গেল, এই তো

একটা চিৎকার ভূতগ্রস্ত হবে এবার...

প্রতিধবনিময় ছুটির ঘন্টা বাজবে নৈশপাহাড়ী কোন
ইস্কুলশীতে।

নেশাচর
অ্যাশট্রেতে নীল আলো...
ঘরে একটু স্বাভাবিক হাওয়া

বসে আছে। বসে থাকে।

আজ বিছানাটা নেই।
কাল আলমারি ছিল না।

চোখের পরিধিময় লেগে আছে হিংস্র বিষণ্ণতা।


মায়া
একটা টেলিস্কোপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকিয়ে আছি টেলিস্কোপের দিকে।
টেলিস্কোপের পেছেনে বসা মানুষটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমরা সকলেই মৃতপ্রায় এবং বিষণ্ণ।

২৭
শেরপারা মরে না কখনও।
পাহাড় থেকে ইচ্ছে করে পড়ে যায় একদিন।

কুলাইডিহি
প্রগাঢ় ধোঁয়ার ভেতরে ঝাঁঝালো রুগ্ন দাদু
দিব্য গোঙাতেন সাক্ষাতে।

বিষাদময় গন্ধ থাকত জমাট বাঁধা
মশার ধূপের;

এরকম সমস্ত বাড়িতেই হয়...

যা কিছু হয় না সেসব
ভূতে পাওয়া দোলনার ডাকাডাকি...

বিষণ্ণ জ্যৈষ্ঠের উঠোনে পচা আম শিল - পড়া আম

অপঘাতে মরে যাওয়া আম।

মায়ের কথা
অচেনাজানা বন্ধু অনেক
অনেক অনেক ছিল   আমারও
ছিল     শব্দকল্পময় এক শহরের ঘোর।

আজ বিকেল খুব একা।
বসে বসে হুবহু শূন্যতা কেঁদে ফেলে

আমারই চোখের মত
নির্জন আয়নায়, আমারই বিপ্রতীপে...

মনে আসে দিনগুলো রাতগুলো সেই
অযথা মাতৃবিয়োগের ভয়,

ভয়ানক রকম স্বপ্নহীন ঘুম আর

তারপর একদিন মায়েদের নিয়মেই
সাবলীল সেরে ওঠা মায়ের আমার।

পাটিসাপটা, দুধপুলি, সান্ধ্য হরলিকস্‌...

বিশুষ্ক
ঋতুমতী শহরের ঘ্রাণে...
হাসিখুশি ধানক্ষেত আর আকাশের মাঝামাঝি
মৃতেরা, ঘুমন্ত পড়ে থাকি বারোমাস তেরোপার্বণ...

স্ম   র  ণি   কা
আসলে মেয়েটা একটা সহজ পরীর
মানুষ - জীবন সম্পর্কে এক স্বতন্ত্র কৌতূহল মাত্র

সবাই এদের চিনতে পারে না।

কেই কেউ দূর থেকে        স্বপ্নে
এদের নিজস্ব গয়না দেখে ফেলে...

সেবার শিলং
ভাল এক পরিবার মনে পড়ে
সেবার শিলং। শান্ত শীত - পাহাড়।

রাস্তার ঘুরপাকে, তুমিও
বেমালুম হাসি।

এরকম এক অ্যালবামে -
আত্মহত্যা, আমি তোমায় আবিষ্কার করেছি।

ঘড়ি
ছোটবেলা বসে বসে, একা
কবজিতে ঘড়ি আঁকতাম।

সবুজ লাল কালো
আরও কত হরেক রঙের

দুতিনটে স্নানের পরেই
মুছে যেত সেই সব ঘড়ি।

কবে আর মনে নেই
মা আমায় ঘুম পাড়ানি গান শোনাত।

আমি বুঝতে পারতাম, আমার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
মায়ের সেই ঘুম পাড়ানি গানগুলো বদলে যেত আস্তে আস্তে

ঠিক যেন... আমি যেরকম চাই।

ঘুমিয়ে পড়ার পর, আমার চোখ দুটো
একটা নরম গন্ধ আবছা ছুঁয়ে যেত -

আমি টের পেতাম ঠিক, কিন্তু চোখ খুলতাম না
আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছি সত্যি সত্যি...

স্বপ্নহীন একটিও শৈশব - রাত নেই আমার।

তারপর হঠাৎ একদিন মা, কবে আর মনে নেই
কুয়োতলায় পড়ে গিয়ে বোবা হয়ে গেল।

আর সারাদিন সারারাত অনর্গল অন্ধকাল বৃষ্টি হল সে বছর।

খামার
আমার মাথার ভিতর
ওরা শুয়ে থাকে সারারাত
শুয়ে শুয়ে গান করে, চাঁদের আলোয়
চুমু খায় একে ওকে, খুন করে
যেকোন মনঝিরি খেয়ালে যেকারু...

নিশ্চিহ্নে
ভয়ানক ক্ষুধার্ত এ বিস্ময়ের রাত,
ভয়ানক একা।

সমুদ্রময় পায়চারি করে এক বৃদ্ধ নাবিক।
আমি তার শ্বাসের শব্দ পাই, এলোচুল
চাঁদের আলোয় খোলা।

জঙ্গলে ভাসমান গমগমে গুম্ফা ডাকে যেন কোন...

বৌদ্ধ তান্ত্রিক অথবা কোন শিশু
ঝুরিভর্তি মানুষখেকো ফুল নিয়ে হাতে
স্বপ্নের নিশ্চিহ্নে দাঁডিয়ে রয়েছে একা, একটা বাঁক...

উল্লম্ব সমুদ্র
স্বপ্নের ভিতরে এক উল্লম্ব সমুদ্র
বেয়ে বেয়ে উঠে আসি অজানা তটে।
অল্প পরেই জঙ্গল - শুরু হয়
ঘন সবুজ বাতাস চিরে
আঁকাবাঁকা চলে আমাদের বিমান...

বিমান আমাদেরকে শোনায় তার
ফেলে আসা শহরের কথা,
কোন এক সন্ধ্যার বিষণ্ণ বসে
হঠাৎ ছুঁতে পাওয়া এক মেয়ের গল্প।

মানুষ চুল কাটতেই শেখেনি এখনও
এমন এক সময় এসে হাসিহাসি মুখে
ঘরে নিয়ে যায় আমাদের।

স্বপ্নের বাইরে যেসব মানুষ
তাদের কথা ভেবে হাসি পায়

সঙ্গী অচেনার দিকে ফিরে হেসে ফেলি
দেখি তার জলে ভেজা সবুজ চোখ...

সেখানেও হাসি খেলে গেল!

চারুবালা, পুটি - পাটি
তোমার তুলোর স্বপ্ন, সেই স্বপ্নে
গুহামানবেরা রাত জেগে থাকে...
করে হুল্লোড়, সম্পূর্ণ জ্যোৎস্নায়।
যা খানিক উজ্জ্বল করে রাখে
তোমার বেডরুম, ইতিউতি

শান্তিতে শুয়ে থাকা বেড়ালের গা।

মৃত্যু স্বপ্ন
অনেক অনেক যিশু এসে
ঘুম থেকে ডেকে তোলে আমায়।
সকলেই বুঝিয়ে বলে -
ঘুম কিছু নয়।

কান্না থামে!
অনেক দূরে কোথাও কান্না থাকে এখন...

সূর্যের পাখিরা সূর্যের গান গায়।
গনগনে রোদে অংশত গলে যায় আমার শরীর...

আমিও অনেক বোঝাতে চেষ্টা করি ওদের -
ঘুমই তো সমস্ত।

হঠাৎ হুল্লোড় করে ফিরে যায় ওরা এক সময় আর
অচেনা একটা মেয়ে এসে একটু পরেই
নিজস্ব এক খুনের গল্প শোনাতে শুরু করে নির্জন আমায়!

স্বীয়  জীবন  এবং  যাপনের  সঙ্গে  মানুষের  যে বিচ্ছেদ  তা-ই
আ   বো   ল   তা   বো   ল  এর অনুভূতি...
শেষবার যেদিন আপনি ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন সেদিনটা কেমন কেটেছিল আপনার?
--- এমনি, যেরকম কাটতো...
না মানে আমি বলছি সেদিন এমন কিছু ঘটেছিল কি... যে আপনি...
--- না, আমি পরদিন সকাল অব্দি জানতাম না যে... আমি আর ঘর থেকে বেরোব না।
তার মানে...
--- ও হ্যাঁ, মনে পড়ে গেল... একবার জাঁকিয়ে শীত পড়েছে আমাদের পাহাড়ে, আর একটানা বৃষ্টি। মেঘ ঢুকে আসবে বলে মা দরজা - জানলা সব বন্ধ করে রেখেছে। সম্পূর্ণ একটা বর্ষাকাল মায়ের গর্ভে কাটিয়ে আমার বেশ ধারণা হয়েছিল যে মেঘের রঙ হয় বেগুনি... আর সুন্দর করে বৃষ্টি হলে মানুষ খুব শান্তিতে থাকে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি যে সুন্দর করে হচ্ছে না সেটাও বুঝতে পারতাম আমি। এই যে এই বৃষ্টিটা... কি বিচ্ছিরি... সুন্দর করে বৃষ্টি হয়েছিল গত পরশু বোধহয়; হ্যাঁ... বাবা নৌকো নিয়ে বেরোলো... ইয়াব্বড়ো - বড়ো দুটো ইলিশ মাছ নিয়ে ফিরে এল সন্ধ্যেবেলা।
অন্ধকার বড়ঘরে মায়ের শুকোতে দেওয়া শাড়িগুলোর রহস্যে কি সব যেন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আমি আর ছোটবোন...
বাবার নৌকো বাঁধার শব্দে ছুট্টে বেড়িয়ে এলাম ঝুলবারান্দায়... বাবা রূপোলী মাছ দুটোর গায়ে নিপুণ আলো ফেলে চোখ ধাঁধিয়ে দিল আমাদের। লুঙা ভর্তি সোনালী ব্যাঙ... সুন্দর বৃষ্টি পেয়ে খুব ডেকেছিল সেদিন... বাবা সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে চুমু খেল আমাদের... বললো সকালে বেড়াতে নিয়ে যাবে—কাছেই কোন এক লুঙায় নাকি প্রচুর কুমীর এসেছে কোথা থেকে... সেই রাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাড়াতাড়ি... মেঘের গন্ধে নিজে থেকেই বুজে আসছিল চোখ। ঘুমোতে খুব ভাল লাগে আমার। কিন্তু আজ কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না আমাদের... একটাও ব্যাঙ ডাকছে না... বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাঙ না ডাকলে ঘুম আসবে কি করে... দাদু শুধু বলতো—“ঘরদোর ছেড়েছুরে চলে আসার পর থেকে ঘুমিয়ে থাকলেই আমরা বোধহয় সবচেয়ে ভাল থাকি।” এতো বিচ্ছিরি বৃষ্টি আমি বহুদিন দেখিনি... বাবা সন্ধ্যে থেকে গোঙাচ্ছে... বোন মুখ বুজে বসে আছে খাবার টেবিলে। এখন মাঝরাত; মা ঠাকুরঘরে বসে বসে কাঁদছেআর কি যেন বলেছিলে তুমি, শেষ যেদিন ঘর থেকে বেরিয়েছিলে... সেদিন রাতে আমি কোন স্বপ্ন দেখিনি আর দেখলেও আহামরি কিছু নয়... এমনি কিছু একটা হবে হয়তো যা আমার আর এখন মনে নেই।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন... সেভাবে কোন কারণ-ই নেই আপনার এতো - এতোদিন চুপচাপ ঘর বন্দী হয়ে থাকার...
--- আমি আবার কখন বললাম এটা। এখন আর চিৎকার করে লাভ নেই। তুমি একটা স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়েছ... অজান্তেই... তুমি আর কখনো-ই এখান থেকে বেরোতে পারবে না...
আমি চললাম। আপনি সস্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছেন...
--- ধন্যবাদ। আর চিৎকার কোরো না... সুন্দর বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে... ঘুমিয়ে পড়ো...
আপনি একটা উন্মাদ। ওরা ইচ্ছে করে পাঠিয়েছে আমায়... আমি কাজে ফাঁকি দিচ্ছিলাম কিছুদিন...
--- শান্ত হও। এসব সবাই জানে।
ওরা বলেছিল কথাবার্তা বলা হয়ে গেলে পুড়িয়ে দিতে আপনাকে...
--- তুমি হাত-মুখ ধুয়ে এসে দোলনায় বসো। এখুনি বৃষ্টি শুরু হবে। সেরকম মেঘের গন্ধ পাচ্ছি আমি।
ওরা বলেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন বেশ্যাটি সব থেকে বেশী দামি...
--- তুমিও তো চুমু খেতে দেখে হাততালি থামিয়ে দিয়েছিলে...
মেয়েটি সুন্দর। আমার হিংসে হয়েছিল...
--- তুমি ঘুমিয়ে পড়ছো...
আমার ঘুমের ভেতরে সব অচেনা মানুষ ঘোরাফেরা করছে...
--- চেনা-জানা মানুষেরা, তোমার অবচেতনের শুদ্ধতাকে ছুঁতে পারছে না আর...


পুরুষ কবরখানা
১।
কবরের ভেতরে জেগে উঠে হঠাৎ
একটা ছেলে একটা মেয়েকে চিঠি লিখতে শুরু করে...

এবং একটু পরেই আবার মরে যায় সে
অসম্পূর্ণ চিঠিটা রক্তে ভিজে যায়, প্রতিদিনকার মতো

নগ্ন নারীর ঘাণ

লালা ঝরে পড়শী কবরগুলোর

কেউ কেউ বেহালা বাজায়...

২।
আমি জিতে ফিরি প্রতি রাতে
সম্পূর্ণ প্রেম, পূর্ণিমা আর উন্মাদ...

ঘুম শান্ত হয়। স্বপ্ন চকলেট চায়...

পকেট থেকে চিরকুট বের হয়

দৌড়ে বাথরুমে যাই আমি,

ঘুম আমায় বিশ্বাস করে

সে কাপড় মেলে দিতে দিতে গুন গুন করে কথা বলে
আমি ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে সিগারেট খাই...

জন্ম
ক্রমশ একটা শীতকালের মধ্যে দানা গুটিয়ে ঢুকে আসছে বিমান ছানাটা। ওর এতদিন কোন শীতকাল ছিল না। সেই কবে ছোটবেলায়--- মায়ের সঙ্গে উড়তে উড়তে একবার পৌঁছে গিয়েছিল একটা বরফজমা পাহাড়ে। চারিদিকে বেগুনি আলোর খাঁজে খাঁজে জ্যান্ত বরফ। পাহাড়ের গায়ে বসতে গিয়ে বিমান ছানাটা টের পায় ওটা আসলে একটা আলোর পাহাড়। সে, ডেকে তার মাকে দেখায়। বিহ্বল মা, গা থেকে তুলে, একটা পালক দিয়েছিল তাকে...


কয়েকটা মানুষ
শুধু
ক্লু হয়ে
ঘুরে বেড়ায়
পৃথিবীতে...

খুম্‌পুই
আজও চংপ্রেং বাজে দূরের পাহাড়ে। শান্ত মানুষের ছোট ছোট ঝাঁক নাচে, গান করে; নেশা করে গড়িয়ে নামে সমতলে। রোদের উলটো পিঠে বসে বাঁশি বাজায়, বিক্রি করে কচিবাঁশ, বনমোরগ, বেতের খাঁচা, আর ও কত কী...

চৈত্রের সুখায় বিব্রত জনপদ আগুন ধরিয়ে দেয় প্রিয় পাহাড়ের গায়। মৃত্যুর কথা বলে টানা একমাস। তারপর তোড়জোড় - রোয়া। সমাহিত হয় আশংকা।

আমার স্কুলে তখন বর্ষাকাল আর প্রসবকালীন লোকগান অপেক্ষা... তিন মাইল দূরের কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র।


ঘুম
সম্ভাব্য এক স্বপ্নের ভয়ে
ঘুম আর আসেই না আমার কাছে।

ঘুম আমায় গল্প শোনাত অনেক

ভয়ের গল্প, ভূতের গল্প, রূপকথার

ঘুম হাসি হাসি মুখে
প্রতিদিন স্কুল অব্দি পৌঁছে দিত আমায়...

ঘুম আমায় প্রথম দেখিয়েছিল
পাহাড়েরা কিরকম পরস্পর জায়গা বদল করে।

আমি ছাড়া আমার ঘুমকে অন্য কেউ দেখতে পেত না!

ঘুমের কোনো ফটো নেই আমার কাছে...


জল
একটা লোক সারারাত আয়নার সামনে বসে থাকে
আর মাঝে মাঝে চোর চোর বসে চিৎকার করে।

সারাদিন সে ঘর থেকে বেরোয় না,
জলের কথা ভাবে, শুধু জলের কথা ভাবে

শুয়ে শুয়ে...

কিভাবে অনেক জল হবে একদিন তার
অনেক অনেক জল;

জলের লোভে তার ঘুম তাকে ছেড়ে চলে গেছে বহুদিন।


কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসঃ সাঁঝবাতি, পুরো বইটি ধরে ধরে টাইপ করে দিয়েছেন... 

1 comment: