মোমবাতি ও স্বপ্নের প্রত্যাবর্তনঃ ঋপণ আর্য




উৎসর্গ


হলুদ ফুল
পাশবালিশ
ধুলোবালি
ফিসফিস
...







উৎসর্গের কবিতা ~ এক

ফুল দিতে পারিনি
হলুদ ফুল...
আসলে ফুলের আশে-পাশে
এমন সব অনুভূতি আছে,
যার এখনও শব্দ তৈরি হয়নি

***




ছেলেবেলায় বাবা একটা কাগজের জাহাজ তৈরি করে
দিয়েছিলেন... আজ সেটা মোমের আলোয় ভাসালাম
________________________________

বোধ ও মননের মধ্যে সুপ্ত ফারাক খুঁজতে দু’চারটে অবকাশ
রবিবারের মতো পর্দা সরিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানায়।
অস্তত্ব জানালা ও দরজার উপর ভীষন আস্থাশীল
কিন্তু আমাদের সুদক্ষ হাত ওখানেও রঙ চাপায়।
প্রতিফলিত রঙে তীব্র হয় দুটি আর্তনাদ—
                             একটা ইচ্ছের, অন্যটা ভয়ের
প্রতিশ্রুতি মিথ্যে হ’লে ভালবাসা, ভাললাগাগুলো
বোতাম সেলাই ভুলে যায়। একথা ঠিক—
অবস্থান কখনও অতীত, ভবিষ্যত ভাবে না। শুধু ভাবে—
‘আজকে থাকাটা জরুরি’।
তবুও অস্বচ্ছ প্রচ্ছয় আঁকড়ে ধরে প্রচ্ছদে নিজেদেরকে
বন্দর ভাবি কেউ কেউ...। জোয়ারের উৎসাহে জোনাকির
জ্বলে ওঠা, অথচ ভাঁটার টানে অস্বচ্ছ অনুভব।
অস্বচ্ছ অনুভব কখনও ঋতুদের ধারক হতে পারে না।
শুধু স্পর্শের পরিসীমায় নিজের আয়তনকে তুলে ধরে।

তাই দৃশ্যরা চিরকাল সাহায্য প্রার্থী হয়ে থেকে যায়
নোঙরের কাছে... তবুও দু’একটা জাহাজ দৃশ্য খুঁজতে এসে ডুবে যায়।
বহুদিন... বহুদিন জলের নীচে। একদিন পাটাতনগুলো
আলগা হলে স্বতন্ত্র অংশেরা পুনরায় ভেসে ওঠে এবং
পেরিয়ে যায় অজস্র প্রতিশ্রুতি... অজস্র বন্দর...


দুই
তারপর সকলেই একদিন সিঁড়ি হয়ে গেলাম।
সিঁড়ির ভাঁজে ভাঁজে তীর্যক রেখা, ভাঙাকাচের গুঁড়োর মতো
অহংকার... সরলরেখা হয়ে খোলা দরজায় আত্মমোচনে
শিখে নেয় চুম্বনের বুনন !
আলো, খোলা দরজা দিয়ে দিনে বাইরে থেকে ভেতরে এবং
রাতে ভেতর থেকে বাইরে যাতায়াত করে। রাত গভীর হলে
সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে আলো, কেঁপে কেঁপে ওঠা সময়।

আয়ু ফুরিয়ে গেলেও
গ্রীবা থেকে
          আরেকটা জন্মদিন
           মাথার কাছে জ্বলিয়ে রাখে মোমবাতি...



তিন
ক্ষতই শেষ কথা নয়।
গলিত মোম দিয়ে আরও একটা মোমবাতি তৈরির
দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বুঁদ হলেই ক্ষমতার অপমৃত্যু।
আর ভোর নিশ্চিত হলেই বাবা আমাকে দেখতে চান...।

তারপর দু’টো মুখ মুখোমুখি বাকি অন্ধকার গ্রাস করে।
পূর্ণতা অনুসরণ করে নাবিকের সংযম!
এখন সেখানে রাত হলে একটা মোমবাতি
নিজের মাংসের চরিত্র বর্ণনা করে।



চার
কিছু সত্যের ভূমিকায়, কিছু মিথ্যের প্রশ্রয়ে
প্রতিশ্রুতিরা দেওয়াল-লিখন হয়ে যায়।
যার সাশ্রয় মূল্য নেই, তার অধিকার মূল্য
আমাদের গ্রাস করে...

সকাল বিকাল চিমনি থেকে ধোঁয়া বের হয়

ভূত শব্দের অভিধান প্রতিফলক রাখে বিস্ময়ে-
মনের বিষাদগুলো মোমের আলোয় পুড়ে যাওয়া
প্রজাপ্রতির ডানার প্রলেপ... সুস্থ হয়ে পুনোরায়
আলোয় আবর্তিত !


পাঁচ
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বৃক্ষের প্রারিত বাহুও
ভালোবাসার বিরুদ্ধচারণ শেখায়।
যার জন্য অস্তিত্ব, তার জন্য টিউশনি ফেরত
শিমুল বোঝে— নিজস্ব ক্ষমতা অপেক্ষিক...
চুম্বক দন্ডের বিপরীত ক্রিয়ার মতোই
আকর্ষণ আত্মহত্যা করে অথবা পাগল হয়ে যায়।

আসন ঘরের মোমবাতি নিভিয়ে মা ফিরলে
এক দৌড়ে মা’র কাছাকাছি
প্রসাদের সিংহভাগ
                 তখন ক্লাস থ্রি...

বরং অবস্থানের হিসাবেই আসি—
ধরি,
বর্তমান = মোমবাতি
আপেক্ষিক = মোমের পুড়ে যাওয়া
অতএব,
    জমে যাওয়া মোমে শিমুলের একমাত্র কাজ
    সলতের যোগান...


ছয়
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই সিদ্ধান্তে ফিরে আসতে চাই প্রত্যেকে।
মাঝের সময়টুকু নির্দেশিত অর্থে ফসল চুরি করে।
ধানের-গোলায় প্রবেশ পথে এক মোম জ্বলে সারারাত...
অনেক সাহসী ইঁদুরের মতোই তোমার পরিচয় উপহার হিসাবে
গ্রহনের পর দেখেছি—দাবি এসেগেছে !
ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রকট হওয় প্রত্যেকেরই...
ইচ্ছার অপচয়ে দেখেছি— প্রিয় মানুষেরা নিজেরাই
বেমালুম মরীচিকা!
তাই আয়নায় নিজের প্রতিকৃতি ঠিক নয় জেনেও
শুধু তার শাসনই গ্রহন করি।
ঘরমুখো প্রতিটা মানুষের হাতে সবজি তুলে দিলেই
সন্ধ্যার গায়ে আরতির শিখা হেসে ওঠে!
শুধু তুমি নও...
শ্মশান ফেরত আমিও স্বভাবিক জীবন-যাপনে নির্বাচিত হই।


সাত
এভাবেই সময় কাটানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করি!
সহ-অবস্থান ও শান্তি এখন অনায়াসে মানতে পারি।
শুধু ‘সিদ্ধান্ত’, যা কখনও বুঝতে পারি না।
অয়নদের বাড়িতে একসন্ধ্যায়
তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে
বিষদাঁত ভাঙতে ভাঙতে একদম ভুলেগেছি।

সত্যের গভীরে যেতে সকলেরই ভয়।
তাই কোনোদিন বুঝতে চাই না—
‘ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেলেই
ক্রমশ বেড়ে চলে স্টেশনের দূরত্ব...’
বরং সুক্ষ্ম এই পরিবর্তনে ভাবপ্রবন অস্বীকারকে গুঁজে দিই

ঘরির কাটা কি জীবাশ্ম ভালবাসে?
যে তাকে পড়তে ভালবাসে, তার নির্দেশ কি অমান্য করে?
তিনি হলে বলতেন— নির্দেশ এবং বোধ, নির্দেশ এবং জীবন
কোনোদিন এক হয় না।

বুঝিনি কিছুই!
শুধু এক একদিন নিজের আঙুল পোড়াতে গিয়ে থমকে গেছি
মোমের আলোয় দেখেছি—
                 আলোর নীচে গাঢ় এক নীল বলয়!
এখনও সেই নীলরঙ
কারও কারও ফেলে যাওয়া হাতের ছাপে
আমাকে হাত মেলানোর ইঙ্গিত করে


পর্বান্তর
বিছানা জুড়ে মোমের আলোরা জ্বলে
তুই খুঁজিস একাকিত্বের মান!
আমি যে তোর খোলা বইয়ের পাতা
চোখের পাতা ডুবিয়ে করিস স্নান...


আট
অভ্যাসের পরিবর্তনে—
             বামচোখ ঈষৎ জ্বলে যায়
             ডানচোখ তবু তোমার চোখের গ্রন্থিতে
             একটা চেনা অভ্যাস সাজাতে ব্যস্ত...
             তুমি তাঁর অঙ্ক কষতে পারো—
হ্যাঁ! সিঁড়িভাঙা অঙ্ক কষতে কষতে ছাত্রটি
সিঁড়ি বেয়েই নামতে থাকে...
মন ভোলানোর টফি কিনতে গিয়ে
হাসি খুশি মুখে কিনে ফেলে অন্যকিছু...

বিশ্রামের ভেতর স্বস্তি খুঁজতে
তার হাসির ভেতর নিজেকে উপস্থাপন করো...
গুচ্ছ গুচ্ছ মুগ্ধতার শেকলে বন্দি হও...
যেহেতু, কিনে আনা মোমবাতির আলোয়
বিশুদ্ধ মন্ত্রের মতো রাত
এই প্রথম তোমাকে চিঠি লেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে...


নয়
ব্যাখ্য কিন্তু থাকবে না।
ক্লান্তি ও শাস্তির সম্ভাবনা ভাঙতে যে ঝড় ভীষণ উদ্যোগী
তার থেকে এক পেয়ালা বাতাস তুমি ড্রয়িংরুমে
সজিয়ে রাখো...

মোমের আলো নেভানোর আগে শুভেচ্ছা
বিনিময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো ধুয়ে নাও,
তার পিচ্ছিল পদার্থগুলো পরীক্ষা কর

তারপর
চূড়ান্তভাবে গ্রহণের আগে ভেবে নাও নিয়ন্ত্রণ...
ওই সব সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ
আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখো
                               জন্ম ও আমাকে


দশ
দখল নিতে নিতে বিমুগ্ধ তুমি, বোঝালে—
ব্যর্থতার দাবি মেটানো কতোটা জরুরি!
ভুল প্রেমেও মোমবাতি নিজেকে অপচয় করে,
চোরা এক জিভ চেটে নেয় যাবতীয় সন্যাস...

খড়-কুটো জড়ো করতে করতে তোমার প্রয়োজন
এখন শুশ্রুষা জমাতে শিখেছে...
আর
আমার প্রয়োজন শিখেছে— কীভাবে
ঈশ্বরের মতো কালো আকাশ মোমের আলোয়
নীল হয়ে ওঠে...


এগারো
এটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়—
জানালার গ্রিলে রোদ্দুর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

তোমার চোখের মধ্যে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের
উপস্থিতি গত রাতেও অঙ্ক কষেছিলো,
মোমবাতির একই অবস্থানে আমি বুঝেছিলাম—
রামধনুর রঙ গোনার আর দরকার নেই !
অমনি তুমিও
অনন্তের রাফখাতা ছুড়ে দিলে জানলায় !

আসলে একটাই তো পথ !
        যে পথে পৃথিবী ঘরে ঢুকছে
       আর আমাদের ঘর বড় হয়ে যাচ্ছে


***

বইয়ের অন্যান্য কবিতা ও সেই সমকালীন কিছু সংযোজন—


ভোর, ১১ই জুন, দুহাজারছয়
জল না দেখেই রঙ বলে দিয়েছি যেই
বৃষ্টি অমনি জানালা হয়ে প্রমান করে দিলো—
মেয়ের শরীরের রোদ !
এদৃশ্য তো কুয়াশারও ছিল
ছিল এ চোখের
এটাই নিয়ম...
গাছেরা হেসেই খুন
নিয়মের মাথা নত
আর আমি জানালার এদিকে

হাওয়ায় হাওয়ায় রোদের ঢেউ ক্রমাগত জানালায়
অথচ মেয়েটি জল হয়ে বসে আছে পাতায় পাতায়



সুন্দর, তুমি সত্যি কি ভাল আছো ?
তুমি বোঝনি কেনো তোমাদের পাড়ায়
সাইকেল করে পিওন হতাম রোজ
আমি বুঝেছি রবিবারও নয় ছুটি
চিঠিগুলো সব টাটকা হলুদ ফুল

ফুলগুলি জানে কতোটা আমি কাঙাল
কষ্টের বুকে বিকালের হোমটাক্স
হাসিমুখ নিয়ে গেটের ভেতরে শুধু
তুমি কি কেবল বন্ধু গ্রিটিংস কার্ড?

সফেদ, তুমি সত্যিকি ভালো আছো?
জেনেছি তুমিও স্বপ্নের কাছে মাঠ
উদাসীন শুধু, লেখো না কেন চিঠি?
তুমি কি চালাক কষ্টকে দাও বাদ!

আজো কি এখনো দুপুরের জ্বর তুমি?
জ্বরের ঘোরেই পথ আঁকি স্রেফ ভুল
পিওন হয়েছি কষ্টের অ্যালবামে
চোখ থেকে ঝরে শুধুই হলুদ ফুল


পাঠক
কাঁপা কাঁপা হাতে এঁকে
উৎস সকল
আমার ধমীতে যাও
জোনাকি

ওরা এসে
ফিনিক্স হয়ে মরে
কুয়াশায় সমুদ্রের আলো হেঁটে গেছে



প্রেম বিষয়ক অন্য গল্প
নীল, হাল্কা ডানার একটি নীলমাছ
বুদবুদ নিঃশ্বাসে
অসমাপ্ত জীবন ভর খেলা করে অ্যাকুরিয়ামে...
ক্রমে ক্রমে দৃশ্যকল্পে ঠিক চির ধরে যায়—
প্রথমে ফ্যকাশে
তারপর সাদা...
সাদা মাঠ... মাঠে তুমি...
তুমি আপেল নিয়ে খেলছ...
আপেল নাকি? নাকি আমার মুহূর্ত?

শামুখ-প্রেমও এক সময়
আকাশে ওড়ে
ডানাঝাপটার শব্দে ঝরে পড়ে
বিলুপ্ত শরীর, অ্যাকুরিয়ামের গন্ধ...
বুদ বুদ নিঃশ্বাসও বাতাসে পুড়ে
এক জীবাশ্ম—
তার নীচে
সারা মাঠ জুড়ে
তখনও একটি খেলা...


স্থায়িত্ব
চাঁদ প্রতিদিনের সম্পর্ক
তবু হিসেবী আড়াল
সম্পর্কের...
এভাবেই প্রতিলিপি সম্পর্কে নামে
রাস্তায় রাস্তায়... উঠোনে উঠোনে

খুউব অসুখের পরিচিতদের খাল পাড়ে ডাকি
দেখাই, এক ঝাড়
সাকোহীন ভাটাপড়া...
স্রোতের একহাটু জলে চাঁদ স্থির।



‘আছি’ সংক্রান্ত
টেবিল-জানালা সবই আছে এখনও
তবু কেনো হায়! ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়
শব্দ-শরীরে কথা বলো ‘দোষ’ তুমি
একা একা থাকা আসলে কি এক ক্ষয়?

কখন কীভাবে চেনা চোখ ভিজে গেছে
সম্পর্কই খুঁজে ফেরে তার মানে
ঝড় এসো তুমি, হিসাবকে মেনে নিও
ভাঙা কিছু কথা রেখে যাও—কানে কানে

আরও নিতে পারো জমানো কিছুটা ধুলো
ফাঁকা হয়ে যাক কষ্টের চেনা গলি
পরতে পরতে ভিজলে আবাদ জমি
আবার জমাবো অজ্ঞাত ধুলোবালি

ধুলোবালি শুধু অন্ধ জন্ম চেনে
অন্ধ হয়েও টেবিলের কাছে আসা
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আজকে বুঝি—
একা একা থাকা দূরবীন পুষে রাখে...



বোঝা
যে ধন বিচ্ছেদের মুখোমুখি
তার অন্তিমতা সর্বগ্রাসী!
স্পম্পর্কের পরিপূরক বলে কিছুই নেই,
অথচ, ঝেরে ফেলা উচ্ছিষ্টও কেউ না কেউ গ্রহন করে!

যে ভাবে বসে ছিলে তুমি
তা আমার বসে থাকাকে ভাঙায়

ছক্কাহীন লুডোর মতো উবু হয়ে পড়ে থাকে ছুটি

উজাড় হয়ে আসা অস্তিত্বে টানাপোড়েন হয়ে
এইসব ভুলবোঝা
ভারি বোঝায় ওঠাতে কে চায় বলো?
একটু বিপরীত ভালোবাসা পাবো বলে
হন্য হয়ে বেঁচে থাকার বয়স বাড়ছে



ফেরা
টেবিলের উপর দু’টো হাত
আত্মহত্যার আগে প্রার্থনা চাইছে—
সারা ঘরের আলো তার প্রার্থনায় কতটুকু অন্ধকার পেয়েছে?
সারা ঘরের ধুপকাঠির গন্ধ কি মেনে নিয়েছে সে প্রার্থনা?
-- সে সব কথা চার দেওয়াল জানে, বন্ধদরজা,
খোলা জানালা, একফালি প্রকৃতি, আসবাব,
আর জানে সিলিং...

কারণ জানে না ছাদ!
এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে টাঙ্গানো দড়িতে ঝুলে আছে—
একটি মোজা, একটি লুঙি আর বছর তিন-চারেকের
বাচ্চা একটি ফ্রক...
নীচে, ছাদে—
বাকি মোজাটিকে চাপা দিয়ে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে
ধুলো খেয়ে পড়ে আছে শাড়ি...
ছাদের বাদবাকি ধুলোরা, মেঘ কেটে গেলে অবশ্যই
একাদশীর আলোয় নিজেদের উৎসর্গ করবে...
তার আগে, এখন—
স্পষ্ট হেসেওঠা অন্ধকারে তারা অন্যরকম
প্রর্থনা সেরে নিচ্ছে...
এইরূপ প্রার্থনায় নিজেকে জড়াতে পারবে না তুমি?
ভেঙে যাক... ভেঙে যাক...
মুখ থুবড়ে পড়ে থাক
                    তীব্র সুনামি...



সামান্যের অভিমান
আস্বাস বিপুলভাবে ক্ষয়টুকু শুষে নিলে নির্ভরতা ছুয়ে থাকে ঠোঁট
নাবিক উপমা ভেঙে জীবাশ্ম ভূমিকা নিয়ে বেলাগুলো ধারক বাহক।
আগাধ স্ময় ভেবে ঝুঁকেছি সন্ধ্যায় আর বাশিতে তুলেছি সমভূমি
ছায়াতে মিশিয়ে ছায়া যাবতীয় হাতছানি আতর বুলানো সব মমি!
কে কখন কার কাছে ফলকে খোদাই করা দাবিহীন ভুলের মাশুল?
সামান্যের অভিমান বুঝতে পারিনি আজও কাটাগুলো ঢেকে রাখে উল।
প্রতিটি চোখের পেটে ডুবুরি পোশাক ফেলে যেত চান আমাদের পিতা
আমরা কী দায়হীন, কুয়াশা বিষাদ ভেবে হারিয়েছি সে সব কবিতা !



বন্ধুকে...
শীতকালে প্রসঙ্গ ছাড়াও
স্পষ্ট রং দিয়ে বাড়ি ঘর আঁকার মতো
পূর্বদিকে এসে যাও অপূর্ব স্মৃতি,
মাথায় নিয়ে ঘুরি,
           তোমার মাফলারটা



কাহিনি বন্ধু ছিল
(মৃত্যু, আমাদের মৃত্যুনকে)
কাহিনি চোখের পাতায় বন্ধু আমার ঘুম নিলো কে ?
লুকোনো মলাটগুলো পিছন ফিরে আঙুল খোঁজে
পিছনে ঠিকানা নেই, খুনির আঙুল খুব পুরোনো
খুনিদের নিয়ম শুধু পথের উপর ঘুম পাড়ানো

কাহিনি মরচে ধরা, জানালার শিকে চোখ গলে যায়
তবে কি চোখ অ্যাসট্রে, খুনির মতো মৃত্যু কুড়ায়!

আমি তো রুগ্ন ছেলে আঙুলগুলো কাঁপছে ভীষণ
কাহিনী ঘুম এনে দাও, স্বপ্নে ভাঙো দৃশ্য দূষণ।
পথ আমার কাহিনি আজ, আর আমি ঘুমের হাত-পাখা
দু’চোখে আঙুল আমার খুনির মতো রক্তমাখা


যে সমস্ত বানানের সংশোধন নেই
নীরবতার জগতের চৌকাঠ পেরনো সময়
দু’হাতে আঁজলা করে সমস্ত কাহিনির
মুখ তুলে ধরে—
নারী-পুরুষের কাহিনি যতটা পুরোনো
তারচাইতে অক্টোপাশের থলথলে শরীরের মতো
কেঁপে কেঁপে ওঠা অন্ধকার!

চোখের যাবতীয় বিশ্বাস নিংড়ে নিয়ে
বসে থাকে পাখি, শীতের পাঁচিলে...

পাঁচিল ভাঙতে চায়নি যারা,
তারাও ভাঙে...

দেওয়ালের সেই পেরেকটি
সব ভুলেও ভাঙে না অহংকার—
গতবারের জায়গায়
ঝুলতে দেখছি এবারের ক্যালেন্ডার


উৎসর্গের কবিতা – দুই
এক-একটা ঘামবিন্দু কখনও কখনও
নক্ষত্রের জন্মকথা হয়ে ওঠে
মুহূর্তে কয়েক আলোকবর্ষ ব্যবধান ঘুচে যায়
শালিখের ঠোঁট একে একে ছঁইয়ে ফেলে
                            দেহের সমস্ত ঘাম
দেহ ছুঁলেই চেনা বিকেল
আর একটা বিকেল ঠিক কতটা বিষণ্ণ হতে পারে?

কলতলায় পড়ন্ত বিকেলের এক টুকরো রোদ
চিকচিক করে
তারই সরলরেখায় একটি শালিখ
খুউব ধীরে
খুঁটে খুঁটে জল খায়


রংচটা ফলাফল
করতলে রেখো উড়ন্ত প্রজাপতি
আগামি জন্মে ব্যথার গভীরে জল
বুকের পাথরে সন্ধ্যার আরতিতে
জল খুঁজে নেবে পাথরের কঙ্কাল।
মিলিত হাসিতে চুম্বন সেরে নেবে
বাউলের গানে মধ্যরাত্রি ভোর
মিথ্যুকেরা মিথ্যেকে ভুলে যাবে
নিরুদ্দেশে পাড়ি দেবে সব চোর।
প্রকৃতপক্ষে তুমি চোর আমি চোর
এসো এই বেলা কানামাছি খেলে ফেলি
ভালোবাসাসহ নিদারুণ অভিমানে
নিরুদ্দেশেই হৃদয়টা অঞ্জলি...
আগামী জন্মে ইতিহাস সহজেই
বৃক্ষের কাছে বর্ষামুখর ছাদ
হৃদয়ের কাছে নির্জন নদীটির
ছায়া মেখে নেবে অশ্বারোহীর হাত।
চোখের সবুজে কবিতার সমাধানে
পেরিয়ে যাবে উঁচু-নীচু সব হিল
দেবী অভিমুখে করতল পেতে শেষে
সন্তান রূপে চেয়ে নেবে মেহেফিল!
অশ্বারোহীর একাকী উপাসনায়
পথের ধুলোয় মুগ্ধ এ দুটি চোখ
নিরুদ্দেশের বিস্তৃত সেই পথে
প্রতিশ্রুতিরা চিত্রনাট্য হোক...

            ...

নিঃসঙ্গতা নির্মাণ বিলি করে
একলব্যের মুগ্ধতা অবিচল
প্রত্ন-হৃদয় ভালোবাসা সেঁকে রাখে
দুইজোড়া চোখ রংচটা ফলাফল।
ডুবো জাহাজে বন্ধুত্বের দাগ
বন্ধুত্ব পাশবালিশের ওম
কেউ মনে রাখে, কেউ কেউ ভুলে যায়
সম্পর্কের জ্যোৎস্না-আবেশী ঘুম
বেঁচে থাকো তুমি নিঃশ্বাসে অপ্রেম
ধ্বংসের মাঝে প্রত্ন হৃদয় খুঁজে
বেঁচে আছি জেনো—কুয়াশার মই পেতে
এক্কা দোক্কা বন্ধুরা যায় ভিজে।
ভেজা বালিশে অনুনয় থেকে যায়
চোখের তারায় সারারাত জ্বলে মোম
থেকে গেছি তাই অদৃশ্য স্লোগানে
উষ্ণ কিশোরী রুমালেই মুছি মন

...

বাকি আগুন তোমার ধরাছোঁয়া
সিঁড়ির ভাঁজে ভেজা অন্ধকারে
ধৈর্যগুলো ঈশ্বরের স্বাদ
ক্লান্তিগুলো থাক নিশুতি দ্বারে...
বাকি গল্পে নাবিক-কবি ঋতু
ক্লান্ত সিঁড়ি দু’চোখে ভাসাভাসা
নিশুতি রাতে দু’চোখ পোড়ামাটি
ক্লান্তি হোক নিশুতির ভালোবাসা





অন্তিম প্রচ্ছদের কবিতা
_________________________
কিছু কিছু মৃত্যু রূপান্তরিত জন্ম
যেমন-
     আগে কেউ হাত চেপে ধরলেই
     হাত লাল হয়ে যেত...
     বাবার অবর্তমানে
     বাজারের ব্যাগেও এখন
     হাত লাল হয় না।


রচনাকাল — ২০০৬
প্রকাশক ও প্রকাশকাল — অভিযান পাবলিশার্স, কলকাতা বইমেলা জানুয়ারি ২০০৭
দ্বিতীয় প্রকাশ ( PDF) — আছি, ১/৫/১৫

No comments:

Post a Comment